রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

২৫ ই আমার মৃত্যু: বাংলাদেশ

 ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, সকাল নয়টা। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী দরবারে সবাই হাজির। কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা তাণ্ডব চালান পিলখানায়। প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। দেশের ইতিহাসের বর্বরতম এই হত্যাকাণ্ডের আট বছর পূর্ণ হলো।

বিভীষিকাময় এই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া আর বিচারের গতি নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন না তুললেও, বিদ্রোহের নেপথ্য কারণ নিয়ে রয়েছে সংশয়। নিহতদের পরিবারগুলো মূল পরিকল্পনাকারীদের সম্পর্কে জানতে চায়। 

হত্যাকাণ্ডে শহীদ মেজর মামুনের বাবা মুজিবুর রহমান আমাদের বলেন, এই যন্ত্রণা বয়ে বেড়ানো কঠিন, তবু আজও জানতে পারলাম না, কারা ছিলো পরিকল্পনাকারী, কী ছিলো আমার ছেলের অপরাধ?

নিহত তত্কালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছোটভাই শফিক আহমেদ সুইট বলেন, আমরা পরিবারের সবাই মিলে কবর জিয়ারত করতে যাবো। দোয়া করা ছাড়া আমরা আর কিই-বা করতে পারবো। 

নজিরবিহীন এ হত্যাকাণ্ডে বিদ্রোহীদের হাতে বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ ও তার স্ত্রী নিহত হন। রেহাই পাননি তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা আত্মীয়রা ও কাজের মেয়েও।

বিদ্রোহের পর বিডিআরের নিজস্ব ও ফৌজদারি- এই দুই আইনে বিচার শুরু হয়।

বিজিবি স‍ূত্রে জানা যায়, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় অভিযুক্তসহ ১৭ হাজার ৩শ ১১ জনকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। এর মধ্যে ছয় হাজার ৪১ জনকে বিশেষ আদালত এবং ১১ হাজার ২শ ৬৫ জনকে অধিনায়ক সামারি কোর্টে বিচার করা হয়। আসামিদের মধ্যে নয় হাজার ১৯ জনকে বিভিন্ন সাজাসহ চাকরিচ্যুত করা হয়। বাকি আট হাজার ২শ ৮৭ জনকে সরাসরি বিদ্রোহে সম্পৃক্ত না থাকায় তাদের লঘু দণ্ড দিয়ে চাকরিতে বহাল রাখা হয়েছে। 

পাশাপাশি হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের ৮শ ৫০ জনের মধ্যে ১শ ৫২ জনকে ফাঁসি, ২শ ৬০ জনকে যাবজ্জীবন ও ২শ ৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। এছাড়া ২০ জন আসামি পলাতক রয়েছে। আবার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ডিএডি রহিম কারাগারে মারা গেছে।

এখন উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলছে। গত বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ৩৫৯তম দিনের শুনানি হয়। মামলায় ১শ ৫২ আসামির ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিদের করা আপিলের ওপর শুনানি আগামী ০২ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করেছেন হাইকোর্ট।

নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের পর এই বাহিনীতে সঙ্কট তৈরি হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে বিজিবি’র বর্তমান মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বলেন, বর্তমানে বাহিনীতে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। সঙ্কট যা ছিলো তা এখন আমরা কাটিয়ে উঠেছি। আমরা জনগণের আস্থাশীল বাহিনী ছিলাম, আর এখনও আছি।  

তিনি আরও বলেন, এখন আমরা যারা পরিচালনার দায়িত্বে আছি, বাহিনীর প্রতিটি স্তরেই কঠোর শৃঙ্খলা ও মনিটরিং করছি এবং সুশৃঙ্খলভাবে বাহিনীকে পরিচালনা করে যাচ্ছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন